ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার ও বান্দরবানের পুলিশ প্রশাসন মাঠে

মাঈনুদ্দিন খালেদ :
গত বুধবার সীতাকুন্ডে বাইশারীর দু’জঙ্গি‘সহ ৩ জন নিহত আর পরেরদিন বৃহস্পতিবার দু’জঙ্গি’সহ আরো ৩ বাইশারীর নাগরিক পুলিশের হাতে আটকের পর সমগ্র চট্টগ্রাম জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। খোঁদ পুলিশ বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘুম রীতিমতো হারাম হয়ে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার সকাল ১০টায় বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলা পুলিশ প্রশাসন স্ব- স্ব জেলার গহীন অরণ্যে সম্ভাব্য জেএমবি তথা জঙ্গি আস্তানা খুজঁতে মাঠে নেমে পড়েছে। গতকাল সকাল ১০ টায় কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেন ছুটে যান জেলার পাহাড়ি জনপদ গর্জনিয়ায়। নাইক্ষ্যংছড়ি ও বাইশারীর মধ্যবর্তী সমতল এলাকা গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়ায় আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রনকারী গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে জরুরী বৈঠক করে পুলিশ সদস্যদের জঙ্গি খোঁজে কিছু গাইডলাইন দেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের। এসময় রামু থানার অফিসার ইনচার্জ প্রভাষ চন্দ্রও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে গতকাল ১৯ মার্চ রোববার সকাল ১২টায় বান্দরবানের পুলিশ সুপার সঞ্জয় কুমার ছুটে আসেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে। তিনি বাইশারীর জেএমবির সাথে জড়িত ও কুমিল্লার চান্দিনায় পুলিশের হাতে আটক হাসান ওরফে ভাগিনা ওরফে ছুরত আলমের গ্রামের বাড়ি। আর গত বৃহস্পতিবার সীতাকুন্ড থানা পুলিশের হাতে আটক জহিরুল হক ওরফে জসিম ও স্ত্রী রাজিয়া বেগম ওরফে আর্জিনার গহীন অরণ্য ঘেরা যৌথ খামারে অবস্থিত জঙ্গি বাড়ির অবস্থান দেখেন। এছাড়া বাইশারীর জঙ্গিদের বেড়ে উঠার যত পথ-ঘাট সহ সব কিছু প্রত্যক্ষ করে আসেন তিনি। এর আগে তিনি বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকদের নিয়েও মতবিনিময় করেন এবিষয়ে। এরই মধ্যে তিনি কয়েক দফা সাংবাদিকদের সাথেও কথা বলেন।
বান্দরবান পুলিশ সুপার সঞ্জয় কুমার এ সময় বলেন, জঙ্গিরা এতো দিন ছিল অনেক দূরে, এখন তারা ঘরে ঢুকে গেছে। আর বসে থাকা যাবে না। সবাইকে বেরিয়ে পড়তে হবে। পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, নেতা-নেত্রী, রাবার বাগান মালিক’সহ সবাইকে এ জঙ্গিদের বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে সাগ্রহে। তিনি আরো বলেন, বাইশারীর প্রতিটি ওর্য়াডে কমিটি গঠন করে জঙ্গি খোজেঁ তৎপর হতে হবে । ৩ দিনের মধ্যে এলাকায় থাকে না এমন লোকজনকে খুজে বের করে তালিকা করতে হবে। এ কাজ শুধূ পুলিশের নয়, সকলের। আর যারা একাজে সহায়তা করবে না তারা নিশ্চয়ই অপরাধের সাথে জড়িত। সুতরাং আর বসে থাকা নয়। ব্লক রেইড শুরু হয়ে গেছে। অপরাধিদের রেহাই নেই।
জবাবে বাইশারীর সচেতন মহল ডাকে সাড়া দেবেন বলে আশ্বস্ত করে তারা বলেন, বাইশারীতে জেএমবির আস্তানা কোন মতেই হতে দেবেনা তারা। এবিষয়ে তারা সজাগ। একাধিক বক্তা বলেন, রোহিঙ্গারা জঙ্গিপনার সাথে জড়িত। তাদের দিকে সকলের সুদৃষ্টি রাখতে হবে। বাইশারী বাজারে বোমা হামলা ও আওয়ামী লীগ নেতা ও ভান্তে সহ দু’ উপজাতী খুনের ঘটনা ভাবিয়ে তুলে সকলকে। এসবের পেছনে কারা জড়িত এখনো উৎঘাটিত হয়নি। এর দায়ভার কার?
অপর দিকে অভিজ্ঞমহলের মতে, বিগত ক’মাস আগে বাইশারী থেকে চৌকস এক পুলিশ কর্মকতার এখান থেকে বদলীর পর থেকে অপহরণ ও জেএমবির উত্থান সহ নানা অপকর্ম শুরু হয়েছে বেপরোয়াভাবে। আইন-শৃংখলার অবনতি হচ্ছে দ্রুত। তারা আরো বলেন, জেএমবি এতো দিন ছিল শহরে, এখন বাইশারীর পাহাড়ে কীভাবে মাথা চড়া দিলো তা তাদের বোধে আসছে না। জেএমবির সেফ হোম বাইশারী হবার পেছনে কার দূর্বলতা চিহ্নিত করা দরকার এখনই। আর কারাইবা এদের গডফাদার খতিয়ে দেখাও সময়ের দাবী। তারা এ জন্যে চায় অভিজ্ঞ ও উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি।
এবিষয়ে বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মো: আলম কোম্পানী এ প্রতিবেদককে জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ৪ শতাধিক লোক এলাকায় থাকে না। জঙ্গির সন্ধান পাওয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় শতাধিক লোক এলাকায় থাকে না বেশ কিছু দিন। তারা মূলত কে কোন পেশায় আছে আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে জানা যাবে।
সীতাকুন্ডে আটক জেএমবি জহির ওরফে জসিম ও রাজিয়া ওরফে আজির্নার বাড়ি বাইশারী ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আবু তাহের জানান, তার ওয়ার্ডে ৫৮ জনের একটি তালিকা নিয়ে জেএমবি কি না যাচাইয়ে মাঠে কাজ করছেন তিনি। তিনি আরো জানান, কিন্তু ৬ জন লোক গত ৬ মাস ধরে কে কোথায় আছেন কেউ জানেন না। তারা হলেন,যৌথ খামারের রুবেল,উত্তর বাইশারীর মিজানুর রহমান,তুফান আলী পাড়ার মো: সালমান ও শফিকুর রহমান,উত্তর বাইশারীর ইউনুছ ও ইউছুফ আলী। তিনি আরো বলেন,তাদের প্রত্যেকের বয়স ২২ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। ধারনা করা হচ্ছে তারা সবাই জঙ্গির সাথে জড়িত।
অপর দিকে ককসবাজার পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেন মাঠে অবস্থান করে গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়ায় ভাড়াটে, এলাকায় অনুপস্থিত যে কোন নাগরিক, চাকুরীজীবি সহ এলাকার বাইরে থাকে সব ধরনের লোকদের তালিকা করতে হবে। বর্তমানে জঙ্গিরা পাহাড়ের দিকে ঝুকছেঁ নিরাপদ আস্তানার আশায়। আর এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, এছাড়াও তিনি গর্জনিয়া পুলিশ ফাড়িঁ পরিদর্শনও করেছেন। পাশাপাশি অন্যান্য বিষয় ও দেখেছেন।

পাঠকের মতামত: